মারজানা আফরিন বাঁধনের কয়েকটি কবিতা

১.

একটা সবুজ মাঠ

বুকের ভেতর ছুট দিয়ে যায়

বিষ্টি ভেজা ছাট।

কৃষ্ণচূড়ার গা ভিজে দেয়

পাহাড়ি তল্লাট।

শিরীষ গাছের পাতা

তিরতিরিয়ে ঘুম ভেঙে দেয়

নিমেষ নীরবতা

ঘরের বাইরে হেঁটে বেড়ায়

একটি বকুল কথা।

দুধের গরম চা

মিষ্টি ধোঁয়ায় গল্প বলায়

সোনারই কাঞ্চা

ছেলেবেলার মুহুর্তটাই

লাল করমচা।

একটা সবুজ মাঠ

ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখায়

সেগুন কাঠের খাট

খুলে বসে স্মৃতির পাতায়

শৈশবের কপাট।

 

২.

দুঃখের নিকষ রাত

আজন্ম আঁতাত

কান্নাভরা চোখ

নীলিম প্রপাত।

বরষ শীতল হাওয়া

গল্প বলে যাওয়া

মেষকালো রঙ

আকাশ ছাওয়া।

ডুবে যাওয়া ভয়

জীবন অপচয়

বুকের সন্তাপ

পাথুরিয়া ক্ষয়।

দুঃখের নিকষ রাত

বিষণ্ণতার হাত

ব্যথার অব্যক্ততায়

ঠোঁটে চাপা দাঁত।

 

৩.

সব মানুষ নিয়ে চলে যায় ট্রেন

কবিতায় পড়ে থাকে জেন অস্টেন

মুখ বুজে কোলে তুলে দুঃখের দিন

বুঝে যাই মরে যাওয়া দিন আসীন।

সবুজ মাঠের কোনে একটু পুকুর

মিঠে পায়ে ছোটাছুটি মিষ্টি খুকুর

চোখের চাওয়া চায় জীবন অসীম

মৃত্যুর ধারা নামে রিম ঝিমঝিম।

সলিল সমাধি জেনে সাঁতার শিখিনি

দু’চোখে তৃষ্ণা তবু আষাঢ়ে ভিজিনি

পাহাড়ি ঝর্না হব সাধ নিয়ে মনে

শেষমেষ আমি কোন ঝিরিও হইনি।

 

৪.

এক নিবিড় সুখী পানকৌড়ি

দুপুর থেকে বিকেল—

শুকিয়ে নেয় দিন, তার রেশমি ডানায়।

পদ্মের ফুটে থাকা কড়ির চিবুক

ভেসে যায় স্বাভাবিক—

পড়ন্ত বেলার রোদ, শ্যামল পাতায়।

পুকুরের পীত গায়ে পানির পোকা

কলমি পাতার দেহ—

ডেকে নেয় জীবন, অগাধ নেশায়।

ঘাটের কিনারায় সুর সরস্বতীর

দেবী থেকে মানুষ—

পা দু’টোর আলতা, আমারও পায়।

বুনোট গাছের ছায়ায় হাঁটে

বিকেল থেকে সন্ধ্যে—

ডুবিয়ে নেয় সূর্য, তার আঁধার গায়।

[লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]